কুষ্টিয়ায় একজন হোমিও ডাক্তারকে কুপিয়ে মেরেছে খুনিরা। তার সাথে থাকা বন্ধুও জখম হয়েছেন মারাত্মকভাবে। ঘটনাটি ঘটে গত শুক্রবার সকালে কুষ্টিয়া শহর থেকে ৭ কিলোমিটারের মতো দূরে এক অজপাড়া গাঁয়। ওখানে ছিল নিহত হোমিও ডাক্তার মীর সানোয়ার হোসেনের বাগানবাড়ি। শুক্রবার মীর সানোয়ার সেখানে গরিব মানুষকে বিনা পয়সায় চিকিৎসা দিতেন। শুক্রবার সকালেও মোটরসাইকেলে সে কাজেই যাচ্ছিলেন বন্ধু ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইফুজ্জামানকে সাথে নিয়ে। নিজের বাগানবাড়ির কাছাকাছি তারা দুজন আকস্মিক হামলার শিকার হন। যত দূর জানা যায়, ডাক্তার মীর সানোয়ার ছিলেন একজন লালন ভক্ত মানুষ, তার বন্ধু সাইফুজ্জামানের সাথে তার সখ্যতার এটিও একটি সূত্র। কিন্তু এ রকম দুটি মানুষ কেন গুপ্ত ঘাতকদের হামলার শিকার হলেন? পুলিশ অবশ্য প্রাথমিকভাবে এই খুন সম্পর্কে কোনো গ্রহণযোগ্য তথ্য দিতে পারেনি। তবে খুনের ধরনের সাথে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্পত্তিক সময়ে ঘটে যাওয়া খুনগুলোর মিল থাকায় মীর সানোয়ার হত্যার সংযোগ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
শুধু মীর সানোয়ার খুন নয়, সারা বাংলাদেশে যারাই খুন হচ্ছেন খুনের ধরন দিয়ে তাকে বিশেষ গোষ্ঠীর কাজ বলে চালানোর সুযোগ পেশাদার খুনিরা নিচ্ছে কি না সে প্রশ্নও তোলার সুযোগ এখন নেই।
যদি বিশেষ গোষ্ঠীই একের পর এক এই ধরনের কাণ্ড ঘটিয়ে যেতে পারে তাহলে অবশ্যই সাধারণ মানুষ ভীত হয়ে উঠবে। দেশের আইনশৃঙ্খলার জন্য তো বটেই একটি চলমান সমাজের জন্য তা মোটেও ভালো কোনো লক্ষণ নয়। সরকার এটা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সমাজে এদের প্রভাব বাড়তে পারে অথবা এর বিপরীতে অন্য কোনো চরমপন্থার জন্ম হতে পারে। যার কোনোটাই আমাদের কাম্য নয়। বাংলাদেশের সমাজে বহু মত বা পথ সব সময়ই সহাবস্থান করে এসেছে। মীর সানোয়ার যদি লালন ভক্ত হয়ে থাকেন বা লালনের ফকিরী মতকে মুক্তির পথ হিসেবে মনে করে তা প্রচার করেন। এটাকে ঠেকানোর জন্য আমাদের সমাজ কখনই চরমপন্থাকে অনুমোদন দেয়নি। বড়জোর এটা নিয়ে বাহাজ হতে পারে। অথবা যে যার পথ নিয়ে প্রচার করতে পারে।
মীর সানোয়ার খুনের প্রকৃত কারণ যাই হোক না কেন, পুলিশ বা তদন্তকারী সংস্থাকে তা খুঁজে বের করতে হবে। তিনি যদি বিশেষ মতের জন্য খুন হয়ে থাকেন সেটাও জনগণের জানার অধিকার রয়েছে। তা না হলে সমাজের অভ্যন্তরে তৈরি হওয়া নতুন সংকটগুলোও বোঝা যাবে না।