নোয়াখালীর কথা ডেস্ক : মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন আরো ৩৮ জন বীরাঙ্গনা। সম্প্রতি তাদের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর মগবাজারে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) কার্যালয়ে ৫৪তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের মুক্তিযোদ্ধার এই স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে ২০১৫ সালের ১২ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ২৩১ জন বীরঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেলেন।
ঢাকা বিভাগে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়া বীরাঙ্গনারা হলেন, শরীয়তপুর সদরের দক্ষিণ মধ্যপাড়া গ্রামের জুগল বালা পোদ্দার, যোগমায়া ও সুমিত্রা মালো, গোপালগঞ্জ সদরের মানিকদির হেলেনা বেগম ও সুলতানশাহীর ফরিদা বেগম এবং গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার নোয়াপাড়া বাজারের মোছা. আনোয়ারা বেগম।
চট্টগ্রামের পটিয়ার আছিয়া বেগম, ফেনীর ছাগলনাইয়ার রহিমা বেগম ও কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আফিয়া খাতুন খঞ্জনী মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছেন।
খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার মোছা. ওজিফা খাতুন, দয়ারানী পরামানিক, মোছা. রাবেয়া খাতুন, কুষ্টিয়ার কুমারখালীর মাছুদা খাতুন, মোছা. মোমেনা খাতুন, মোছা. এলেজান নেছা, কুষ্টিয়া সদরের আলমপুরের মৃত রাজিয়া বেগম এবং বাগেরহাটের রামপাল কুবলাইয়ের মোসা. ফরিদা বেগম মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছেন।
রাজশাহী বিভাগে এ স্বীকৃতি পেয়েছেন জয়পুরহাট সদরের খঞ্জনপুরের মোসা. জাহানারা বেগম, সিরাজগঞ্জের তাড়াশের অর্চনা সিংহ ও মৃত পচি বেওয়া, নওগাঁ সাপাহারের তিলনা রাজবংশীপাড়ার মৃত পান বিলাসী, নাটোর বড়াইগ্রামের মোছা. হনুফা।
রংপুর বিভাগের নীলফামারীর মোছা. শাহেলা বেগম, লালমনিরহাটের শেফালী রানী, মোছা. রেজিয়া, মোছা. মোসলেহা বেগম, শ্রীমতি জ্ঞানো বালা এবং ঠাকুরগাঁওয়ের মোছা. আমেনা বেওয়া মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছেন।
বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠি সদরের নথুল্লাবাদের সীমা বেগম এবং বীরকাঠির মোসা. আলেয়া বেগম মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছেন।
ময়মনসিংহের শেরপুরের নলিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দির মোছা. মহিরন বেওয়া, মোছা. আকিরন নেছা, মোছা. জতিরন বেওয়া, মোছা. হাসনে আরা, মোছা. হাজেরা বেগম ও হাজেরা বেগম এবং শেরপুরের ঝিনাইগাতীর মৃত ফিরোজা খাতুন মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছেন। এছাড়া সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জের মাধবপুরের সন্ধ্যা ঘোষ এ স্বীকৃতি পেয়েছেন।
১৯৭১ সালে ডিসেম্বরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের সময় নির্যাতিত নারীদের ‘বীরাঙ্গনা’ স্বীকৃতি দিয়ে তাদের সম্মান জানান। তার নির্দেশনায় বীরাঙ্গনাদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়, যা ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের আগ পর্যন্ত চলছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এই প্রক্রিয়াটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সামরিক শাসকদের মাধ্যমে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে পাকিস্তানি জান্তার সহযোগীদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়। পরে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
এরই মধ্যে এ বিষয়ে আদালতের নির্দেশনাও আসে। শেষ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের চার দশক পর ২০১৪ সালের ১০ অক্টোবর বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল। পরের বছরের ২৯ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে ওই প্রস্তাব পাস হয়। এরপর ২৩১ জনকে বীরাঙ্গনা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।